লেখার ভেতরে প্রবেশ এর পূর্বে চলুন আগে জেনে নেই এস ই ও ফ্রেন্ডলি কনটেন্ট বলতে কি বোঝায়?
সহজভাবে বলতে গেলে এটা এরকম একটি বিষয় যা সার্চ ইঞ্জিন আপনার কনটেন্টটাকে কিভাবে দেখবে সেটার উপর গুরুত্ব দিয়ে লেখা হয়।
দুঃখের কথা বলতে গেলে, যদি ও অনেক মার্কেটার এবং ব্লগার যারা এস ই ও এর উপর এত বেশী গুরুত্ব দেয় যে, তারা তাদের ভিজিটরদের কথাই ভুলে যায়। আপনি কনটেন্ট লেখার আগে আপনার পাঠকদের কথা চিন্তা করুন এবং তাদের জন্য উপকার হবে এমন কোন কিছু লিখার চেষ্টা করুন। অর্থাৎ আপনার ভিজিটর কি চায়, সে চাহিদার উপর ভিত্তি করে কনটেন্ট লেখার চেষ্টা করুন। আপনার উচিত আপনার ব্লগের ভিজিটরদের কথা চিন্তা করে কনটেন্ট লিখা, সার্চ ইঞ্জিন এর কথা চিন্তা করে নয়।
যদি আপনি ব্লগিং এ নতুন হয়ে থাকেন এবং আপনার একটি নতুন সাইট থাকে তাহলে এটা স্বাভাবিক যে আপনি আপনার সাইটের ভিজিটর বাড়াতে চাইবেন।
আপনি চান যে আপনার সাইট লোকে আবিষ্কার করুক এবং দীর্ঘ সময় থাকুক আর বিশ্বস্ত ভিজিটর হয়ে থাকুক।
সবশেষে, আপনি হয়ত চাইবেন এক্সটারনাল সোর্স হতে ব্যাক লিংক যা সাইটের জন্য খুবই দরকারি।
আপনি জানেন কি অনলাইনে প্রতিদিন ২৭ মিলিয়ন কনটেন্ট শেয়ার হচ্ছে। কনটেন্ট এর পরিমান চিন্তা করে দেখুন আপনাকে পেরে উঠতে হলে কত সুন্দর কনটেন্ট তৈরি করতে হবে! আর কনটেন্ট সুন্দর না হলে আপনার সাইট সার্চ ইঞ্জিন এ রেঙ্ক পাবে না। আর সার্চ ইঞ্জিন এ রেঙ্ক না পেলে আপনার সাইট ভালো করতে পারবে না।
তাই, নিচে সার্চ ইঞ্জিন ফ্রেন্ডলি কনটেন্ট লেখার ৮ টি টিপস আপনারদের সাথে শেয়ার করছি, এগুলো ফলো করলে আশা করি, আপনি ভালো মানের কনটেন্ট লিখতে পারবেন...
১। উপকারি(Useful) এবং আকর্ষণীয়(Attractive) বিষয়ে লিখুন
যখন আমাকে প্রশ্ন করা হয় যে, কিভাবে একটি ভালো কনটেন্ট লেখা সম্ভব, তখন আমি উত্তরে বলি যে, মানুষের উপকারি, দরকারি এবং বিনোদনমুলক কনটেন্ট লেখার চেষ্টা করুন। অধিকাংশ সময় সার্চ ইঞ্জিন এ ধরণের সাইটকে প্রধান্য দেয়। আবার আপনি যদি পাঠকদের সাথে রিলেটেড কনটেন্ট(related content) শেয়ার করতে পারেন তাহলে ও সার্চ ইঞ্জিন আপনাকে প্রাধান্য দিবে।
যত বেশী আপনার কনটেন্টটা পাঠকদের উপকারি আর বিনোদন দিবে, তত বেশী আপনার কনটেন্টটা শেয়ার হবে। তবে, একটি ভালো কনটেন্ট বা আর্টিকেল সবসময় তার গুন(quality) ধরে রাখে।
অনেক সাইটের মালিক মনে করে যে তারা যদি বেশী বেশী কনটেন্ট সাইটে যোগ করে তাহলে তারা রেঙ্কিং এ ভালো করতে পারবে। এটা একটি মারাত্মক ভুল ধারণা। অর্থাৎ আপনার সাইটে অজনপ্রিয় কনটেন্ট বেশী থাকার কারনে আপনাকে পরবর্তীতে হতাশ হতে হবে। আসলে কুয়ালিটি এবং কুয়ানটিটি(Quality and Quantity) দুটোরই প্রয়োজন। তবে কুয়ালিটি প্রথম এবং আপনার কন্টেন্টসমূহের নুন্যতম কুয়ালিটি ধারন করা আবশ্যক।
২।সংক্ষিপ্ত এবং পয়েন্ট ভিত্তিক
পাঠকদের কতটুকু সময় আছে এবং তারা কতটুকু সময় আপনার সাইটে দেয় সেটা আপনাকে বিবেচনা করতে হবে। আপনি আপনার কন্টেন্টটি সংক্ষিপ্ত এবং পয়েন্ট ভিত্তিক লিখার চেষ্টা করুন। কিছু কিছু আর্টিকেল খুব বড় এবং লম্বা হয়ে থাকে। সেগুলো পড়তে অনেকেরই বিরক্ত লাগে। আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, যদি কোন ব্যক্তি আপনার টিউন বা আর্টিকেল ৫ বা ১০ মিনিট যাবৎ পড়ে তাহলে আপনি কনটেন্টের জন্য আপনি স্থায়ী পাঠক পাবেন। আপনি পয়েন্ট দিয়ে লিখলে লিস্ট তৈরি হবে। আমি লিস্ট পছন্দ করি। পাঠক যেন সহজে বুঝতে পারে তাই সহজ করে লিখার চেষ্টা করুন।
তবে আর্টিকেল এর বিষয়বস্তুর উপর এটা নির্ভর করে। যেমন, কোন বিষয় যদি ৫০০ শব্দে বুজানো যায়, তবে সেটা কে ৫০০০ শব্দে উপস্থাপন করা হলে নিশ্চয়ই তা ভালো লাগবে না, তাই না?
আবার, অন্যদিকে, যদি কোন বিষয় ৫০০০ শব্দে বুজাতে হয়, তবে সেটা ৫০০ শব্দে উপস্থাপন করলে অবশ্যই খুব বেশি সংক্ষিপ্ত হয়ে যায়, তাই নয় কি!
৩। আপনার কীওয়ার্ড নির্বাচন করুন এবং বিজ্ঞতার সাথে ব্যবহার করুন
একটি আর্টিকেল লেখা শুরু করার পূর্বে হয়ত আপনি কোন কীওয়ার্ড ব্যবহার করবেন তা অলরেডি বাছাই করে ফেলেছেন। এই কী ওয়ার্ড গুলোকে আপনার আর্টিকেল এর টাইটেল, মেটা- ট্যাগ এবং বডিতে অন্তর্ভুক্ত করুন।
অধিকাংশ পাঠক যথেষ্ট জ্ঞানী হয় এবং তারা আপনি কি করছেন তা দেখে আপনার সাইট থেকে বিদায় হয় ও আর কখনো ফিরে আসে না।
অলসতা দেখাবেন না। আপনার কনটেন্টটিকে ট্যাগ করুন। এটা করলে সার্চ ইঞ্জিন অনেক সঠিকভাবে আপনার সাইটকে তালিকাভুক্ত করতে পারবে। ফলে খুব সহজে আপনি সার্চ ইঞ্জিন এ একটা পজিশন পেয়ে যাবেন।
৪। নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গিঃ
যে বিষয়ে আপনি আর্টিকেল লিখেছেন হয়ত প্রত্যেকেই সে বিষয়ে লিখতে পারবে কিন্ত আপনার আর্টিকেলএ আপনার নিজের গল্প এবং নিজের অভিজ্ঞতা যোগ করুন দেখবেন সেটা সবার চেয়ে আলাদা হবে। আর্টিকেল লিখার সময় মাঝে মাঝে প্রশ্ন করবেন আবার সে প্রশ্ন-এর উত্তর আপনি নিজেই দিয়ে দিবেন। এ পদ্ধতি আপনার পাঠকদের আর্টিকেলটি পড়তে মজাদার করে তুলবে। যদি আর্টিকেলটিতে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি এবং পাঠকের দৃষ্টিভঙ্গি মিলে যায় তাহলে এ আর্টিকেলটি অধিক শেয়ার হবে এবং এতে অধিক পাঠকের আগমন ঘটবে।
৫। লেখার মধ্যে লিংক দিন
আপনি যখন আপনার লিখিত আর্টিকেল এর মধ্যে লিংক যোগ করবেন তখন যা করতে হবে তা হচ্ছে আর্টিকেল এর মাঝে বা শেষে বলে দিবেন না যে "এখানে দেখুন" বরং আপনি আর্টিকেল এর মাঝে শব্দের উপর লিংক করুন। এটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কেনোনা, আপনাকে সঠিক এঙ্কোর টেক্সট এর উপর লিংক করতে হবে।
আবার আপনি যখন কোন অধিক অথোরেটিভ সাইট থেকে আপনার সাইট এর জন্য ব্যাক লিংক যোগ করেন, গুরুত্তপূর্ণ উৎস হিসাবে তখন আপনি যে তথ্য শেয়ার করেছেন সেটার উপর পাঠকদের অধিক বিশ্বাস তৈরি হয়। অন্যদিকে, সার্চ ইঞ্জিন ও এতে অধিক গুরুত্ব দেয়।
৬।সার্চ ইঞ্জিনে ভালো রেঙ্কিং এর জন্য ইমেজ অপটিমাইজ করুন
টেক্সট এর সাথে সম্পর্ক যুক্ত ইমেজ ব্যবহার করুন। এটা আপনার আর্টিকেলকে শুধু অধিক সুন্দর ই করবে না বরং টেক্সট এর সাথে সম্পর্কিত কীওয়ার্ড দিয়ে ইমেজ আপটিমাইজ করতে পারবেন। ইমেজ অপটিমাইজ করে রিলেটেড টিউনে ইমেজ শেয়ার করুন।
আপনার কন্টেন্ট এ ইমেজ সাইজ বড় হলে এটা লোড নিতে বেশি সময় লাগবে। তাই, ইমেজকে এডিট করে ইমেজের সাইজ কমিয়ে এর লোডের টাইম কমান। আপনার লোড টাইম বেশি হলে, ভিজিটর বিরক্ত হয়ে লোড হবার আগেই, আপনার পেজটি ক্লোজ করে দিতে পারে। অন্যদিকে, ইমেজ লোডের উপর ও এস ই ও এর অনেক প্রভাব পড়ে। আসলে, সাইট লোডিং টাইম এসইও এর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
ইমেজটা যত সম্ভব ছোট দেয়ার চেষ্টা করুন তবে খেয়াল রাখবেন এর কুয়ালিটি যেন নষ্ট না হয়।
অন্যদিকে, আপনার ইমেজ যত সুন্দরই হোক না কেন, সার্চ ইঞ্জিন বট ইমেজ বা ইমেজ এর মধ্যে কি আছে তা পড়তে পারে না। তাই ইমেজ সম্পর্কে ধারণা ও করতে পারেনা। এক্ষেত্রে, আপনাকে ব্যবহার করতে হবে ALT ট্যাগ বা অলটার ট্যাগ। এই ট্যাগ টি সার্চ ইঞ্জিন বট কে ইমেজ সম্পর্কে তথ্য প্রদান করে। যার ফলে, সার্চ ইঞ্জিন বট ঐ তথ্য অনুসারে ইমেজটি ইনডেক্স করে নেয়। পরবর্তীতে যখন ভিজিটর সার্চ করে, তখন রিলেটেড কিওয়ার্ড ভিত্তিক ঐ ইমেজটি শো(show) করে।
৭। কনটেন্ট পাবলিশ করার আগে প্রুফ রিডিং(Proof Reading) করুন
এটা অবশ্যই প্রত্যেক লেখকের জন্য জরুরি। অর্থাৎ আপনার লিখিত কনটেন্ট পাবলিশ করার আগে ভালভাবে কনটেন্ট বা আর্টিকেলটি পড়ে নিন। আপনার কাজ সঠিক হয়েছে কি না সেটা প্রমান পাওয়ার জন্য প্রফ রিডিং নিন। অর্থাৎ পাবলিশ করার আগে আর্টিকেল এর বানান, ইমেজ সঠিকভাবে বসিয়েছেন কিনা সেটা নিশ্চিত হয়ে নিন।
আপনি যদি কীওয়ার্ড ঠিকভাবে ব্যবহার করতে না পারেন তাহলে আপনার সমস্ত কঠিন পরিশ্রম বিফল হয়ে যাবে। তাছারা আপনি নিশ্চয়ই চাইবেন না যে, আপনার পাঠকরা বানান বা ব্যকরনগত ভুলের কারনে আপনাকে বিরক্ত করুক। তাই না?
তাই, পাবলিশ করার আগে একবার সম্পূর্ণ লেখাটা ভালো করে পড়ে নিন। এতে যে সমস্ত এডিট এর প্রয়োজন তা করে নিন।
৮। আপনার কন্টেন্টটি শেয়ার যোগ্য করে তুলুন
ধরে নিলাম যে, আপনি উপরোক্ত টিপস সমূহ অনুসরণ করে একটি কিলার আর্টিকেল লিখেছেন এবং এটা পাবলিশ করে দিয়েছেন। এখন পরিবর্তী গুরুত্বপূর্ণ কাজ বা ধাপ হচ্ছে, এই আর্টিকেলটি শেয়ার যোগ্য করে তোলা।
আপনার সাইটে সব ধরণের লিডিং সোসাইল শেয়ার সাইটের পোর্ট গুলো রাখুন। আপনার রিডাররা যেন তাদের পছন্দমতো সোসাইল নেটওয়ার্কিং সাইট এ আপনার কন্টেন্ট টি সহজে শেয়ার করতে পারে, সাইট এ সে ব্যবেস্থা রাখুন। আপনার কনটেন্টটি যদি সোসাইল মিডিয়াতে বার বার শেয়ার হয় তাহলে আপনার সার্চ ইঞ্জিন রাঙ্কিং ও বেড়ে যাবে। আর সোসাইল মিডিয়াকে কখনো অবমুল্যায়ন করবেন না। কেনোনা, বর্তমানে, সার্চ ইঞ্জিন সমূহ বিশেষত গুগোল, সোসাইল মিডিয়াকে(কোন টিউন এর উপর লাইক, শেয়ার, টিউমেন্ট ইত্যাদি কার্যক্রম কে) অনেক বেশি গুরুত্ব দেয়।
আমার এস ই ও ফ্রেন্ডলি কন্টেন্ট এর উপরে ৮ টি টিপস এখানেই শেষ। আপনি যদি এসইও ফ্রেন্ডলি কন্টেন্ট তৈরি করতে চান, তবে এখন আপনার পালা। আশা করা যায় যে, উপরোক্ত টিপসসমূহ অনুসরণ করে আপনার কন্টেন্ট তৈরি করা হলে, সেগুলো সার্চ ইঞ্জিন ভালোবাসবে এবং আপনার পাঠকেরা ও পছন্দ করবে। তবে, একটা কথা...সার্চ ইঞ্জিন মূলত গুরুত্ব দেয় পাঠকের সমাদৃত কন্টেন্ট এর উপর। তাই, পাঠকের জন্য মানসম্পন্ন কন্টেন্ট তৈরি করলেই আপনার কন্টেন্ট অবশ্যই সার্চ ইঞ্জিন লাইক করবে।
0 comments:
Post a Comment